You are currently viewing ফেরা

ফেরা

‘তুমি দেখি আগের মতই সিগারেট খাও এখনও!’কণার নির্লিপ্ত অভিযোগ শুনে রাহির যেন সম্বিত ফিরে পায়।সোজা সমুদ্রের দিকটা থেকে চোখ না ফিরিয়েই বলে- ‘সিগারেট খাওয়া নিয়ে তো অভিযোগ করোনি আগে কখনও..’
‘আজও তো কোনো অভিযোগ করছি না,এমনিতেই বললাম’
‘হম’
দু’জনাই চুপ করে যায়..কথা খুঁজে পায় না যেন।
‘তুমি যে বলেছিলে আমার চেয়ে ঢের ভালো ছেলে রণ,আসলেই?’ রাহি যেন অনেকটা অস্থির হয়েই বলে ওঠে।
কণার ঠোঁটের কোনে ব্যাঙ্গের হাসি ‘তোমার শুনেছিলাম একটা বিয়ে হয়েছিলো,বউ নাকি পালিয়েছে?’
রাহি যেন আরো বেশি নির্লিপ্ত ‘হম,আমার সাথে থাকাটা হয়তো কঠিন,কেউ থাকে না বেশিদিন,তুমিও তো থাকলে না।’
‘সত্যি!সত্যিই আমিও থাকলাম না!?’
‘আমাকে চ্যালেন্জ করে বিয়ে করলে! শুধু চ্যালেন্জে জিততে,কি লাভ হলো বলো তো?’
‘তুমি কিন্তু এবার তোমার লিমিট ক্রস করছো! কি লাভ হলো কথাটার মানে কি? আমার স্বামী সংসার নিয়ে আমি ভালো আছি,অনেক ভালো’
রাহি এবার কণার দিকে তাকিয়ে হো হো করে হেসে ওঠে!
কণার গা-টা গুলিয়ে উঠলো রাহির হাসি শুনে ‘তুমি একটা অসভ্য,তোমার অসভ্যতা এতটুকু কমেনি,অসহ্য!অসহ্য!!’
রাহি কোনোমতে নিজের হাসি বন্ধ করে,সিগারেটের অবশিষ্টটুকু বালিতে পিষ্ট করতে করতে বলে ‘তোমার রাগটা কিন্তু আগের মতই আছে,তুমি ঠিক আগের মতো সুন্দর আছো,গোছানো,সুন্দর..’
নিজের প্রশংসা শুনে পরাস্ত হয় একটু কণা ‘কি যে বলো! ৬বছর বাচ্চা মা এখন আমি। ওর স্কুলের ক্যাম্পেই তো আসলাম কক্সবাজারে! তোমার সাথে দেখা হয়ে গেল। কি অদ্ভুত! একই শহরে এই ৮বছরে আমাদের দেখাই হলো না আজও! যাইহোক, তুমি কিন্তু বদলে গেছো,একটু গেইন করেছো। আগের মতো জংলীও মনে হচ্ছে না।স্বভাবেও,দেখতেও’
রাহির হাসি পেলেও নিজেকে সামলায় ‘এখন তো হাসতেও পারবো না তোমার এসব কথা শুনে! আমি জংলী ছিলাম বুঝি? কই সেসময় তো তুমি আমার দাড়ি-মোচ,আমার বুনোটে স্বভাবই তোমার খুব ভালো লাগে,বলতে…!’
কথা কেড়ে নিয়ে কণা বলে ‘কম বয়সের বাচ্চাদের মতো স্টেটমেন্টকে আজও দেখি সিরিয়াসলি নিচ্ছ..’
‘আচ্ছা নিলাম না,তবে সত্যি সত্যি একটা কথা বলবে?’ একটু ভয়ে ভয়ে রাহি বলে ‘তুমি যে বলছিলে না,স্বামী সংসার নিয়ে সুখে আছো…আসলে তুমি যেমনটা আমার সম্পর্কে খবর পাও,আমিও তো তোমার সম্পর্কে একটু-আধটু খোঁজ পাই,কারন আমাদের একই ফ্রেন্ড সার্কেল।’
অনেকটা অধৈর্য হয়ে রাহির কথাগুলো কণা শুনে বলে ‘আচ্ছা,তুমি লন্ডনেই বেশি থাকো,না?’
‘হম’
‘আর বিয়ে করবে বলে কিছু ভাবলে?’
‘আচ্ছা তুই যে এত কুল প্রিটেন্ড করতি,তুই কিন্তু পুরো মেয়েলি হয়ে গেছিস! আই মিন শুধু মেয়েলি না,পুরো একটা খালাম্মা খালাম্মা টাইপ মেয়েলি! বিয়ে করা ছাড়া জীবনে আর কোনো কাজ নাই?’
‘এতবছরেও তুই বেয়াদবই রয়ে গেছিস! বেয়াদব একটা!’
‘ওই তুই আমাকে তুই বলছিস কেন?’
‘তুইও তো তুই বলছিস’
২জনই হো হো করে হেসে ফেলে,এতবছর পর দেখার যে অস্বস্তি,যে মারামারির মধ্যে দিয়ে শেষ দেখা,সব ধুলায় ধুলিসাৎ হয়ে গেল যেন নিমিষেই। কে বলবে মাত্র ৮বছর আগে ২জন পণ করেছিল -একজন অন্যজনের মুখ দর্শন করবে না!
আস্তে আস্তে ২জনের যেন সব হাসি শেষ হয়ে যায়।
আবারও রাজ্যের আড়স্টতা ভর করে ২জনের মধ্যে।
পেছন থেকে একদল বাচ্চা ছুটে আসে ওদের ২জনের দিকে।ওদের ৩জন স্কুল শিক্ষক সামলাতে চেষ্টা করে,বাচ্চাদের মধ্যে থেকে রিন্থী বলে ওঠে ‘মা চলো আমরা হোটেলে ফিরবো’
‘চলো মা’ উঠে দাড়িয়ে জামা ঝাড়তে থাকে কণা
‘আর কি দেখা হবে না কখনো আমাদের?’ রাহি অস্থির হয়ে বলে ওঠে।
‘প্রয়োজন কি তার আর?’ বসে থাকা রাহিকে নির্লিপ্ত কন্ঠে বলে কণা।
‘সব কিছুতেই শুধু প্রয়োজনের খোঁজ ! যার কাছে তুমি প্রয়োজনীয় না, তার কাছে তবে কেন আছো? এত জেদ, শুধু আমাকেই দেখিয়ে গেলে আজীবন!’
প্রচন্ড রাগ হয় কণার, হেঁটে রওনা দেয় বাসের দিকে, যেদিকে বাচ্চাদের দল এগিয়ে চলেছে। আবার কি মনে হতে ফিরে আসে। রাহিকে বলে ‘আমরা তো ভার্সিটির প্রথম দিন থেকেই বন্ধু ছিলাম,প্রেমটা যে হলো,বন্ধুত্বটা কি শেষ হয়ে গেল? কেন গেলি, কেন?’
‘কই কেন গেলাম’
‘একদম ন্যাকামি করবি না! কেন সেদিন শুতে গেলি স্বর্ণার সাথে? বল? কেন?’
রাহি উঠে দাড়িয়ে কণার দু’কাধে হাত রাখে ‘একবার ভুল করেছি,মাত্র একবার, কতবার ক্ষমা চেয়েছি? আর কতবার ক্ষমা চাইলে তুই ক্ষমা করতি? আর কতবার ক্ষমা চাইলে তুই এই অসম্মানের সম্পর্ক- বিয়ে ছেড়ে বেরিয়ে আসবি? ঢাকা শহরের সবাই তো তোর বিজনেস টাইকুন হাজবেন্ডের স্বভাব সম্পর্কে জানে!’
‘রণকে দোষ দেই না আমি। কোনোদিন তো আমিই ওকে ভালোবাসতে পারিনি।’
‘যাকে ভালোবেসেছিস সারাজীবন,তার সাথে একটু দেখা করতে এত আপত্তি !’
‘কি ভাবিস নিজেকে?’ ফোঁস করে ওঠে কণা। আবার রওনা দেয় বাসের দিকে।
‘আমি আর ৩দিন আছি দেশে, মাহিনের কাছে আমার ফোন নাম্বার পাবি!’ পিছন থেকে রাহির কথাগুলো শুনে কণা বাসে উঠে। রওনা হয় সামনের দিকে বাস। হোটেল থেকেই এখন এয়ারপোর্টে যাবে ওরা। ঢাকায় ফিরবে।
কেন যেন বুকের ভেতরটা ফাঁকা অনুভব করে কণা। চলন্ত বাস থেকে ওর দিকেই তাকিয়ে থাকা রাহিকে দেখতে পায়।
বুকের ভেতরটা এত মোচড় দিচ্ছে কেন কণার ? সেই যে ৮বছর আগের দম বন্ধ হওয়া কষ্ট, আজ আবার যেন সেই কষ্টটা প্রাণ খুঁজে পেয়েছে। পাশে বসা মেয়েকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে কণা! বাসটা চলতে থাকে।

This Post Has One Comment

  1. Mazed Maruph

    ভালো লাগলো।

Leave a Reply